January 1, 2026, 3:57 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
চলতি বছরে মব সন্ত্রাসে নিহত ১৯৭ জন, মানবাধিকার পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক: আইন ও সালিশ কেন্দ্র রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বেগম খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন কুষ্টিয়ায় শ্বশুরবাড়ির উঠান থেকে জামাইয়ের মরদেহ উদ্ধার ভারতের শোকবার্তা পৌঁছাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় রাজশাহীতে ইন্তেকাল করেছেন বেগম খালেদা জিয়া, জিয়ার কবরের পাশেই দাফনের পরিকল্পনা কুষ্টিয়ার ৪টি আসনে ৩৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল, কুষ্টিয়া–৪’এ বিএনপির দুই বিদ্রোহী এনসিপির সব কার্যক্রম থেকে নিজেকে নিষ্ক্রিয় ঘোষণা নুসরাত তাবাসসুমের সাতক্ষীরায় ভারত থেকে আমদানি ৮ হাজার ৬২২ টন, কমেনি মাষকলাই ডালের দাম ঘন কুয়াশায় সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে পাটের বাম্পার উৎপাদন: সম্ভাবনার ঊর্ধ্বগতি, চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চলতি ২০২৫ সালের মৌসুমে দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ জেলা ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে পাটের বাম্পার ফলন কৃষি খাতে আশাবাদের নতুন দিগন্ত খুলেছে। তবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে ন্যায্যদামের বিষয়ে এক ধরনের শঙ্কা রয়ে গেছে।
পাটচাষ সংশ্লিষ্টদের মতে, উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পাট চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ফরিদপুর ও বাজবাড়ীর জলবায়ু এ অনুকূল পরিবেশ সরবরাহ করায় জেলা এখন দেশের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। নদীবিধৌত এলাকা হওয়ায় এখানে পাটের ফলন ভালো হয় এবং চাষিদের আয়ের একটি প্রধান উৎস হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাটের গুরুত্বও পুনরায় বাড়ছে। অনেক কৃষক ধান ও অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পাট চাষে মনোনিবেশ করছেন, কারণ এতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং বাজারে ভালো মূল্য পাওয়া যায়।
ফরিদপুরে পাট উৎপাদনে রেকর্ড প্রত্যাশা/
গত এক মাসের টানা বৃষ্টিপাত ফরিদপুর জেলার পাট চাষে যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। নিচু জমি, পুকুর ও খালের পানিতে পাট পচানোর আদর্শ পরিবেশ তৈরি হওয়ায় কৃষকরা এবার উন্নতমানের আঁশের আশা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছর প্রায় জেলাতে ৮৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই লাখ টনের বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার সম্ভাব্য বাজারমূল্য ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে চরভদ্রাসন ছাড়া বাকি আটটিতেই উল্লেখযোগ্য হারে পাট চাষ হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় আবাদি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশেই পাটের চাষ হয় এবং এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত পাঁচ লাখের বেশি কৃষক।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান জানান, “চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানির সংকট হয়নি, যা আঁশের মান ও রঙ উন্নত করতে সহায়ক হবে। ফলে কৃষকরা উন্নতমানের পাট পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।” তিনি আরও বলেন, “জেলায় এবার দুই লাখ টনের বেশি পাট উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এর বাজারমূল্য ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।”
রাজবাড়ীতেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাট চাষ, দামে শঙ্কা/
রাজবাড়ী জেলায়ও এবছর পাট চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গতবছরের তুলনায় প্রায় ৮০০ হেক্টর বেশি জমিতে এবারে পাট চাষ হয়েছে মোট ৪৭,২৭৬ হেক্টর। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ এলাকায় ফলন সন্তোষজনক এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা প্রবল।
জেলা দুটির প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই চলছে পাট কাটার ব্যস্ততা। মাঠে দেখা গেছে কেউ পাট কাটছেন, কেউ জাগ দিচ্ছেন, কেউ বা আঁশ ছাড়িয়ে শুকাচ্ছেন। ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বেশিরভাগ উপজেলায় এখন যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
চাষিরা জানান, মৌসুমের শুরুতে খরার কারণে সেচ দিয়ে উৎপাদন চালাতে হওয়ায় খরচ বেড়েছে। প্রতি মণ পাট উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৩,৫০০ টাকারও বেশি। বাজারে দাম ৫,০০০ টাকার নিচে নেমে গেলে কৃষকরা লোকসানে পড়তে পারেন।
এদিকে, রাজবাড়ীতে কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি জমে থাকায় পাটের গড় আকৃতিতে সমস্যা মনে করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, জলাবদ্ধতায় নিচু জমির পাট কেটে তুলতে শ্রমিক বেশি লাগছে, যার ফলে খরচও বেড়ে গেছে।
একজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, ফলে এক বিঘা জমির পাট কাটতে লাগছে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক।
চাষিরা অভিযোগ করছেন, বাজারে ন্যায্য দাম না পেলে লাভ পাওয়া কঠিন হবে। তাদের দাবি, প্রতি মণ পাটের দাম যেন ৫,০০০ থেকে ৫,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং সার, বীজ, কীটনাশকের দাম সহনীয় রাখা হয়।
চলতি মৌসুমের শুরুতে খরার কারণে উৎপাদন নিয়ে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিলেও পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন বৃষ্টি ও জুলাইজুড়ে টানা বর্ষণে সেই শঙ্কা কেটে যায়। বরং এতে পাটের মান আরো উন্নত হওয়ার আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, “এ বছর ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি আছে, ফলে আলাদাভাবে সেচ দিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে না। এতে খরচ কমেছে। তিনি আশা কনের কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।”
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের পাকালিয়া গ্রামের পাট চাষি আলমগীর হোসেন ভুইয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে নিচু জমির পাট পড়ে গেছে। যে কারণে কেটে জাগ দিতে কৃষিশ্রমিক বেশি লাগছে। খরচও বেশি পড়ে যাচ্ছে। এক বিঘা জমির পাট কাটতে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক লাগছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার বসুলিয়া গ্রামের পাট চাষি হারুন রশিদ আসকার জানান, একেকজন কৃষি শ্রমিকের মজুরি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক মণ পাট উৎপাদন করতে খরচ হয়ে যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২শ টাকা। এই কৃষকের প্রশ্ন তিনি কতটাকায় বিক্রয় করলে লাভবান হবেন এটা কোন বছরই পরিস্কার হয় না। তার দাবি এক মণ পাটের দাম ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net